চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে নজরদারিতে রয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত পুলিশ ৩০ জনের বেশি সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ভূমিকা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পুলিশের ব্যর্থতার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পর, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খানকে বদলি করা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বন্দর জোনের ডিসি শাকিলা সোলতানা। সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ এই বদলির আদেশে সই করেন।
পরে কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরীকেও বদলি করা হয় এবং তার স্থলে সিএমপির বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. আবদুল করিমকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সহকর্মী সাইফুল ইসলামের হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতিও পালন করেন তারা, যার ফলে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
বিক্ষোভ সমাবেশে আইনজীবী নেতারা অভিযোগ করেন, “ঘটনার দিন সকালে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে ইসকন অনুসারীরা আদালত এলাকায় জড়ো হয়ে হামলা চালায়।” তারা আরও বলেন, “মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মোটরসাইকেলে হামলা চালানোর পর আইনজীবীদের বাধা দিতে গেলে ইসকন অনুসারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট সাইফুলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।”
আইনজীবী নেতারা সিএমপি কমিশনারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে।”
সোমবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর ইসকন অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা আদালত এলাকায় মসজিদ, দোকান এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। বিকেলে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে ইসকনের একদল অনুসারীর হাতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নির্মমভাবে খুন হন।
বুধবার চট্টগ্রাম শহরে দুই দফা জানাজা এবং লোহাগাড়া উপজেলায় আরও দুই দফা জানাজা শেষে সাইফুল ইসলামকে তার গ্রামের বাড়ি চুনতি ইউনিয়নের ফারেঙ্গা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।