২০২৪ সালের শেষপ্রান্তে এসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরেকটি বছর শেষ করল। এই মুহূর্তে পুরো বছরের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিশ্লেষণের সুযোগ থাকলেও ডিসেম্বর মাসটি ইতিমধ্যেই লাল-সবুজের জন্য বিশেষ হয়ে উঠেছে। এই মাসেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিনিধিরা তিনটি উল্লেখযোগ্য জয় উপহার দিয়েছে, যা সমর্থকদের জন্য নিয়ে এসেছে নতুন উদ্দীপনা।
ডিসেম্বরের সাফল্যের শুরুটা হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্সের হাত ধরে। প্রথমবারের মতো ক্যারিবীয় দ্বীপে আয়োজিত গ্লোবাল সুপার লিগে সোহান, সৌম্য, রিশাদ ও শেখ মেহেদীদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ে শিরোপা জয় করে রংপুর।
৬ ডিসেম্বর ফাইনালে রংপুর রাইডার্সের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিক্টোরিয়া ক্রিকেট একাডেমি। টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকারের অসাধারণ ৮৬ রানের (৫৪ বল) ইনিংসে রংপুর দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করায় ১৭৮ রান। জবাবে ভিক্টোরিয়া শক্তিশালী শুরু করলেও শেখ মেহেদী, হারমিত সিং, সাইফ হাসান ও রিশাদ হোসেনের বোলিং তোপে তারা মাত্র ১২২ রানে গুটিয়ে যায়। রংপুরের এই ৫৬ রানের বড় জয় ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সাফল্যের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়।
রংপুরের সাফল্যের দুই দিন পর, ৮ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় অর্জন করে। রোমাঞ্চকর এই ফাইনালে যুব টাইগাররা ভারতকে ৫৯ রানে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়।
বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ১৯৮ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দেয়। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন রিজান হোসেন। পাশাপাশি শিহাব জেমসের ৪০ এবং ফরিদ হাসানের ৩৯ রানে লড়াই করার মতো সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে ভারতীয় দল আজিজুল হাকিম তামিম ও দেবাশীষ দেবার বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায়।
ডিসেম্বরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন আসে ১৬ ডিসেম্বর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় বছর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ এবং প্রথমবারের মতো তাদের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করল।
সিরিজের শেষ ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টে টাইগাররা ৮০ রানের বড় জয় তুলে নেয়। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জাকের আলি ৪১ বলে ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলের বড় সংগ্রহ নিশ্চিত করেন। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬.৪ ওভারে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট হয়ে যায়। রিশাদ হোসেন ২১ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচের সেরা বোলার হন। তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদী দুটি করে এবং তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ একটি করে উইকেট শিকার করেন।
এই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে। ভারত, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের পর বাংলাদেশ চতুর্থ দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠেই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল।
ডিসেম্বরের এই তিনটি বড় জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন আশা জাগিয়েছে। যুব দল থেকে জাতীয় দল এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যেভাবে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে, তা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। বছরজুড়ে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, তার চেয়েও এই সাফল্যগুলো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।