ছয় দফা দাবির প্রেক্ষিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দেশব্যাপী রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী। তিনি দেশজুড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং একই সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “আমাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল বদলাতেই যদি সরকারের সারাদিন লেগে যায়, তাহলে তারা আমাদের দাবি কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? দেশের অগ্রগতিতে কারিগরি শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও আমাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই—আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঢাকা সহ সারা দেশে রেল অবরোধ করবো।”
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপের মুখে বুধবার রাতেই ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান-কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সাহেলা পারভীন-কে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধভাবে দেওয়া পদোন্নতির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের পদবির পরিবর্তন আনতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় জড়িতদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে। এছাড়া, ২০২১ সালে যে বিতর্কিতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে নতুন ও স্বচ্ছ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে এবং চার বছর মেয়াদি মানসম্মত কারিকুলাম চালু করতে হবে। পাশাপাশি পরবর্তী পর্যায় থেকে পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদগুলোতে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও যেসব প্রতিষ্ঠানে তাদের নিচু পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনে যে সব পদে কারিগরি শিক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ এবং খালি পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ দিতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বিদ্যমান বৈষম্য ও সমস্যাগুলো দূর করতে একটি স্বতন্ত্র কারিগরি শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন এবং দ্রুত একটি কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া, নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ের নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডুয়েটের আওতায় অস্থায়ী একাডেমিক কার্যক্রম চালু করে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।