শিরোনাম

ফেনীতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা, নেই বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে
ছবি : সংগৃহীত

ফেনীতে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে সীমান্তঘেঁষা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বহু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও মিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা রোধে প্রায় ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে, অনেক এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। ছাগলনাইয়ার একাধিক গ্রামে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামে ১২টি ও ফুলগাজীতে ৯টি ভাঙনসহ মোট ২১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা পানির নিচে চলে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া এবং ফেনী সদরের কিছু অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার প্রশাসনের সমন্বয়ে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন।

ফুলগাজীর বাসিন্দারা জানান, নদীর পানি কিছুটা কমলেও ভাঙা অংশ দিয়ে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। গলা সমান পানি পার হয়ে অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। খাদ্য বা প্রশাসনিক সহায়তাও সময়মতো মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত তিন দিন ধরে জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও হালকা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, বুধবার রাত ১১টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বাঁধ ভাঙা জায়গা দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমে গেলে দ্রুত বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাগলনাইয়ার ইউএনও সুবল চাকমা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে স্রোতের গতি বেড়ে যায়। দুর্গত মানুষের জন্য ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সহায়তায় প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, চারটি উপজেলার মোট প্রায় ২০ হাজার মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে সাত হাজারের মতো মানুষ অবস্থান করছেন। ত্রাণ সহায়তার জন্য ছয় উপজেলায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে।